১৭ মার্চ ২০২৩


“গোয়াইনঘাটে নজর কাড়ছে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া নওয়াগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্প”

শেয়ার করুন

সৈয়দ হেলাল আহমদ বাদশা, গোয়াইনঘাট : প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের অন্যতম আশ্রায়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় তৃতীয় ও ৪র্থ পর্যায়ের জমিসহ গৃহনির্মাণ প্রকল্পগুলো সারাদেশব্যপী আগামী ২২ মার্চ  উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । তিন জেলার প্রকল্পগুলোর মধ্যে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের নওয়াগাঁও আশ্রয়ন প্রকল্পও এর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) প্রকল্প পরিচালক( যুগ্ম-সচিব) আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান স্বাক্ষরিত পত্রের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে।

জানা গেছে, সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের ‘নওয়াগাঁও আশ্রয়ন প্রকল্পটি এখন সকলের নজর কাড়ছে। যাহা দেশের আশ্রয়ন প্রকল্পের মধ্যে হতে যাচ্ছে একটি মডেল গ্রাম। এই লক্ষ্যে ঐ প্রকল্প বাস্তবায়নের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সর্বোচ্ছ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করেছে গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসন। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে “বাংলাদেশের একজন মানুষও ভুমিহীন বা গৃহহীন থাকবে না” প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে দেশের সকল ভূমিহীন ও গৃহহীন অর্থাৎ “ক” শ্রেণীর পরিবার পুনর্বাসন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় ইতোমধ্যে ৮৯৫টি গৃহ নির্মাণ করা হয়েছে। যার মধ্যে ‘নওয়াগাওঁ আশ্রয়ণ প্রকল্পে’ একসঙ্গে নির্মিত হয়েছে ১শত’টি ঘর।

এর আগে গোয়াইনঘাট উপজেলায় এক জায়গায় একসঙ্গে ১শ’টি ঘর নির্মিত হয়নি। তবে  প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে এক-ই এলাকায় একসঙ্গে সর্বোচ্চ ৭০টি, অন্যস্থানে একত্রে ১৫টি ও ১৬টি ঘর হয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে ৪র্থ পর্যায়ে এ উপজেলার বিভিন্নস্থানে আরোও ২০৬টি গৃহের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। সব মিলিয়ে এ উপজেলায় আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে ৫শটি, ২য় পর্যায়ে ৪০টি, ৩য় পর্যায়ে ৩৫২টি ও ৪র্থ পর্যায়ে ২০৬টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।

উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানা যায়, গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের হাওর বেষ্টিত এলাকার মধ্যখানে নির্মিত ‘নওয়াগাঁও আশ্রয়ন প্রকল্প’টি এখন দৃশ্যমান। অনেকদূর থেকেও সকল মানুষের নজর কাড়ছে এ আশ্রয়ন  প্রকল্পটি। উপজেলা প্রশাসন তথ্যনুসারে গোয়াইনঘাট উপজেলাধীন নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের নওয়াগাঁও  গ্রাম থেকে এক কিলোমিটার পূর্ব দিকে ৫.৩৬ একর জমির চতুর্পাশে খাল খনন পূর্বক ৩.২৫ একর জমি ৬-৭ ফুট উচ্চতায় ভরাট করে প্রায় ২বছর কম্পেকশন এর পর সেই জমিতে ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ভরাটকৃত এ জমিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছে ১০০টি ঘর।

নওয়াগাওঁ আশ্রয়ণ প্রকল্প হলো: মৌজা-লামাপাড়া, জে.এল নং- ১৬৬, খতিয়ান নং- ১, দাগ নং- ৪৭, ৪৯ ও ৫০ এতে মোট জমির পরিমান ৫.৩৬ একর (দৈর্ঘ্য ৭৩০ ফুট, প্রস্থ ৩২০ ফুট), ভরাটকৃত জমির পরিমাণ ৩.২৫ একর (দৈর্ঘ্য ৬৩৫ ফুট, প্রস্থ ২২৫ ফুট) ওই জমির চতুর্পাশে খাল খনন পূর্বক জমি ভরাট করা হয়েছে।

খননকৃত খালের দৈর্ঘ্য ১৪৫০ ফুট, খালের পানিধারণ ক্ষমতা, ৪.৮৮ মিলিয়ন গ্যালন, প্রকল্পে নির্মিত গৃহ সংখ্যা ১শ’টি (প্রতিটি গৃহে দুটি বেডরুম, একটি বারান্দা, একটি রান্নাঘর ও একটি টয়লেট রয়েছে) প্রতিটি ঘরে  নির্মাণ ব্যয় ২ লক্ষ ৫৯ হাজার ৫শ টাকা। এতে গভীর নলকূপ সংখ্যা হচ্ছে মোট ১০টি (সাবমার্জেবল পাম্প ও ওভারহ্যাড ট্যাংকসহ), প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, প্রতিটি গৃহে পৃথক মিটারসহ বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা হয়েছে।

যোগাযোগ ব্যবস্থা সিলেট হতে গোয়াইনঘাট উপজেলাগামী নওয়াগাঁও গ্রামের প্রধান পাকা সড়ক হতে প্রকল্পের সংযোগ সড়কের দূরত্ব ১কি.মি. যা পাকাকরণের কার্যক্রম চলমান।স্থানীয় বাজার হতে দূরত্ব ইউনিয়ন এর প্রধান বাজার “সালুটিকর বাজার” হতে দূরত্ব ৪ কি.মি.।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, এ প্রকল্পের কাছাকাছি স্থানে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ১ম পর্যায়ে ৩টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছিলো। ২০২১ এর জানুয়ারি মাসে সেই ঘরগুলো পরিদর্শনে যান সিলেট -৪ আসনের সংসদ সদস্য, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। পরিদর্শনের সময় কালবৈশাখী ঝড়ে বিধ্বস্ত একটি খড়ের ঘরের পাশে নওয়াগাওঁ গ্রামের মৃত হাতিম আলীর ছেলে ইউনুস আলীকে কান্নারত অবস্থায় মন্ত্রীর চোখে পড়ে। এসময় মন্ত্রী তাঁর সাথে কথা বলে তাকে শান্ত¡না দেন এবং তাকে একটি সরকারি ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। এ সময় মন্ত্রী ওই এলাকায় খাস জমি সনাক্ত করে সেখানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ১শ’ টি ঘর নির্মাণ করার পরিকল্পনা তৈরী করতে স্থানীয় প্রশাসনকে  নির্দেশ দেন।

মন্ত্রীর এ নির্দেশনার প্রেক্ষিতে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে খাস জমি বাছাই পূর্বক মাটি ভরাটের কাজ শুরু করা হয় এবং পরবর্তীতে মাটি কম্পেকশন এর পর সেই জমিতে ঘর নির্মাণ করা হয়। আগামী ২২ মার্চ বুধবার  প্রকল্পটির উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশের আশ্রয়ন প্রকল্পের স্বপ্নদ্রষ্টা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এদিকে ২২ মার্চের উদ্বোধনকে ঘিরে উপজেলা প্রশাসনের নিবিড় তদারকি মনিটরিং ও বেড়েছে কর্মব্যস্ততা। উদ্বোধন অনুষ্ঠানকে সফল করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিলুর রহমান,উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভীর হোসেন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নন্দিরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস কামরুল হাসান আমিরুল এবং উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শীর্ষেন্দু পুরকায়স্থ প্রতিদিন একবার করে মাঠ পরিদর্শন করছেন। প্রকল্পের কাজে সংশ্লিষ্ট সকলকে সার্বিক দিকনির্দেশনা ও তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব বুঝিয়ে দিচ্ছেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কোন কিছুতে যাতে কোনো প্রকার ঘাটতি না থাকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।সকল কিছুর বিনিময়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সফল ও সার্থক করাই তাঁদের কাম্য।

সরজমিন দেখা যায়, নওয়াগাঁও আশ্রয়ন প্রকল্প উদ্বোধনের আগেই  স্ব স্ব ঘরের দখল বুঝে পেয়ে সেখানে তাদের পরিবারোর লোকজন নিয়ে ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।তারাও উদ্বোধনের দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে তাদের সাধ্যমত জিনিসপত্র দিয়ে পরিপাটির মাধ্যমে ঘরকে সাজিয়ে তুলছেন। স্বপ্নের এই ঘর পেয়ে তারা ভীষণ খুশী, এজন্য মহান আল্লাহর শুকরিয়া জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার  মানবিক এ উদ্যোগের জন্য তারা ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ।

শেয়ার করুন