২৪ ডিসেম্বর ২০২৩


তেল-গ্যাস নিয়ে নতুন সম্ভাবনার নাম টুপিটিলা

শেয়ার করুন

ডেস্ক রিপোর্ট : সম্ভাবনা দেখাচ্ছে সিলেটের মাটি। খনিজ সম্পদে ভরপুর সিলেটে তেল-গ্যাস প্রাপ্তির আশা আরো উজ্জল হয়ে উঠছে। সিলেট-১০ নম্বর কূপের পাশে টুপিটিলায় নতুন আরও একটি কূপ থেকে প্রচুর পরিমাণে তেল-গ্যাস পাওয়া যেতে পারে বলে জানিয়েছে জালালাবাদ গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড। থ্রিডি সিসমিক সার্ভে (ত্রিমাত্রিক জরিপে) করে এমন ইঙ্গিত পেয়েছেন তারা।

জানা গেছে, গত ১০ ডিসেম্বর রোববার সিলেটের হরিপুর এলাকায় ১০ নম্বর কূপ থেকে চার স্তরের তেল গ্যাস পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। চার স্তরের মধ্যে একটি স্তরে সম্পূর্ণ তেলের খনি রয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।

সিলেট গ্যাস ফিল্ডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত বলেন, ভূতাত্ত্বিক কারণে সিলেট অঞ্চলে অনেক খনিজ সম্পদ রয়েছে। গ্যাস ও তেল অনুসন্ধানের জন্য সিলেটের ১ হাজার ৬৫ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ত্রিমাত্রিক জরিপের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৯০০ বর্গমিটার এলাকায় জরিপ সম্পন্ন হয়েছে। জরিপের রিপোর্টে নতুন কিছু ইঙ্গিত পেয়েছি। নতুন কিছু কূপ খনন করতে পারবো।

তিনি বলেন, ত্রিমাত্রিক জরিপের রিপোর্ট অনুযায়ী সিলেট ১০ এর কাছাকাছি টুপিটিলায় গ্যাস-তেল পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। টুপিটিলায় তেল ও গ্যাস দুটোই অনুসন্ধানের জন্য একটি কূপ খনন করা হবে। সেখান থেকে তেল ও গ্যাস দুটিই পাওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী বছরের শুরুতে এ কূপের খননকাজ শুরু হবে।

২০২৪ সালের মধ্যে জাতীয় গ্রিডে ১৬৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে সিলেট গ্যাস ফিল্ডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘বর্তমানে সিলেটের চারটি গ্যাসকূপ থেকে প্রতিদিন ৯৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। আগামী বছরের মার্চ মাসের মধ্যে নতুন করে আরও ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া ২০২৪ সালের মধ্যে ১৬৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করার পরিকল্পনা রয়েছে। সে আলোকে কাজ করছে সিলেট গ্যাস ফিল্ডস কর্তৃপক্ষ।

সিলেট গ্যাস ফিল্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশে ১৫৭টি প্রকল্প উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এরমধ্যে সিলেট গ্যাস ফিল্ডসের ৭ টি প্রকল্প উদ্বোধন করা হয়। ঐ ৭ প্রকল্পের মধ্যে একটি ছিল কৈলাসটিলা-২ কূপ। উদ্বোধনের পর গত ২৩ নভেম্বর থেকে প্রতিদিন ৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ হচ্ছে। এছাড়া বিয়ানীবাজার-১ কূপ থেকে প্রতিদিন ৯ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ হচ্ছে। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে মধ্যে রশিদপুর-২ কূপের কাজ শেষ হলে সেখান থেকে প্রতিদিন ১৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস এবং মার্চ থেকে কৈলাসটিলা-৮ কূপ থেকে ২১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৪ সালে নতুন আর পাঁচটি কূপ খননের অনুমোদন দিয়েছেন। সেগুলো খনন হলে প্রতিদিন আরও ৭৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে এখন যে প্রযুক্তি নিয়ে কাজ চলছে সেসব প্রযুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন উচ্চচাপযুক্ত কূপ নিয়ন্ত্রণ করার সক্ষমতা রয়েছে। তারপরও কূপ খননে নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই কাজ করছি। সিলেট গ্যাস জোনের মধ্যে যে পরিমাণ গ্যাস রয়েছে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে প্রতিদিন ২৫০-৩০০ মিলিয়ন গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে। সিলেটের এ গ্যাস জাতীয় গ্রিডে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

সিলেট ১০ নম্বর কূপ প্রসঙ্গে মিজানুর রহমান বলেন, এ কূপে চার স্তরের গ্যাস ও তেলের মজুত রয়েছে। একটি স্তরে শুধু তেল রয়েছে। কী পরিমাণ তেল রয়েছে তা নিশ্চিত হতে আরও অন্তত ৬-৮ মাস সময় লাগবে। আমরা প্রথমে গ্যাস উত্তোলন করবো। এরপর তেল উত্তোলন শুরু হবে। আমাদের যে সক্ষমতা রয়েছে তার মাধ্যমে তেল-গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব। তবে প্রয়োজন হলে বিদেশি কনসালট্যান্ট নিয়োগ করা হবে।

দেশে ৩৭ বছর পর আবারও সিলেটের হরিপুরে ভূগর্ভে তেলের সন্ধান পাওয়া গেছে। গত রোববার বিজয়ের মাসে জাতিকে এ খবরটি জানান বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। এরআগে সবশেষ ১৯৮৬ সালে হরিপুর এলাকায়ই মিলেছিল তেলের সন্ধান।

সিলেট গ্যাস ফিল্ডস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এখান থেকে দৈনিক ৫০০-৬০০ ব্যারেল হারে তেল পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নতুন এ কূপটিতে ৮-১০ মিলিয়ন ব্যারেল তেল ও প্রায় ২০০-৩০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্তত ২০ বছর এ সুফল মিলবে বলে জানান তারা।

শেয়ার করুন