২৫ জুন ২০২৩
নিজস্ব প্রতিবেদক : নগরীতে দিনদুপুরে বরাবরের মত এক আদম সন্তানের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে ঘাতক ট্রাক । নিহত শফিক মিয়া (৬৫) নগরীর বড় বাজার এলাকার মৃত হাসিম মিয়ার পুত্র। এ ঘটনায় জনমনে ক্ষোভ এবং নগরজীবনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।
রোববার বিকেল ৪টার দিকে নগরের নাইওরপুল পয়েন্টে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একজন মোটরসাইকেল আরোহী নগরের নাইওরপুল পয়েন্ট সংলগ্ন ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের সামনে পৌঁছামাত্র দ্রুতগামী একটি ট্রাক মোটরসাইকেলটিকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই আরোহীর মৃত্যু ঘটে।
ঘটনার পর নাইওরপুল পয়েন্টে কর্মরত ট্রাফিক পুলিশ ও কোতোয়ালি থানার সোবহানিঘাট ফাঁড়ি পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। পাশাপাশি ট্রাক আটক করলেও বরা্বরের মত পালিয়ে যায় ট্রাকের ঘাতক চালক।
দিনদুপুরে সিলেট নগরে ট্রাকচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহতের ঘটনায় জনমনে ক্ষোভ ও আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা নগর পুলিশের দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। যে সময়ে ঘটনাটি ঘটে সে সময়ে নীতিগতভাবে নগরের অভ্যন্তরে ট্রাকের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে চালক ঘাতক ট্রাক নিয়ে কিভাবে নগরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে মানুষের প্রাণহানী ঘটায়, সেটা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সচেতন নাগরিকরা।
প্রায়ই অভিযোগ পাওয়া যায়, নগরে মালবোঝাই ট্রাক-পিকআপ আর ব্যক্তি মালিকানাধীন গাড়ির চালকরা বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। বিকট শব্দে হর্ন বাজিয়ে গতির প্রতিযোগিতায় নামে গাড়ি। বেশিরভাগ চালকই থাকেন মদ্যপ। আর অজ্ঞাতকারণে এই বেপরোয়া গতির গাড়ি সামলাতে হিমশিম খেতে হয় ট্রাফিক পুলিশকে।যে কারণে প্রায়ই ঘটে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানী।
বিধিগতভাবে রাত ১০টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত সিলেট নগরে ট্রাকের আধিপত্য থাকলেও অনেক সময় দেখা যায় নির্ধারিত সময়ের আগেও মালবাহী ট্রাক সিলেট নগরে প্রবেশ ও পার্কিং করে থাকে। সন্ধ্যার পরপরই নগরের অনেক সড়কে ট্রাক চলাচল করতে দেখা যায়। বিশেষ করে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ থেকে পাথরোহী ট্রাক নগরের ভেতর দিয়ে সবচেয়ে বেশি চলাচল করে। এতে প্রায়ই ঘটে থাকে দূর্ঘটনা। আর এসব ঘটনায় প্রাণহানিরও ঘটে।
গত দেড় বছরে নগরের আম্বরখানা- তেমুখী সড়কে ট্রাক চাপায় শাবিছাত্রসহ ৪মোটরসাইকেল আরাহীর প্রাণহানী ঘটে। গত ৭ জুন ভোরে সিলেট মেট্রোসিটির নাজিরবাজারে পাথার বোঝাই ট্রাক ও পিকআপের সংঘর্ষে ১৪ জন শ্রমিক নিহত হন।
এছাড়া এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো ১৩ জন।
নগরের ভেতর দিয়ে ট্র্রাক চলাচল বন্ধেরও দাবি ওঠেছে বিভিন্ন সময়। তবে কখনোই বন্ধ হয়নি ট্রাক চলাচল। এতে করে যানজটের পাশাপাশি হতাহতের ঘটনা ঘটে প্রচুর। কিন্তু এর দায়ভার নিতে হয় না কর্তব্যরত পুলিশ ও প্রশাসনকে।
অভিযোগ রয়েছে, কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশকে টুপাইসের বিনিময়ে ট্রাক নিষিদ্ধ সময়েও নগরে প্রবেশ করে থাকে। আর এ কারণে অনেক প্রাণহানীর ঘটনা ঘটে। ইতোপূর্বেও প্রাণহানীর অনেক ঘটনা ঘটলেও এর দায়ভার কিন্তু পুলিশকে নিতে হয়নি। নিষিদ্ধ সময়ে ট্রাক বা গাড়ি দুর্ঘটনা কবলিত হয়ে প্রাণহানী ঘটলেও কর্তব্যরত পুলিশকে দায়ভার নিতে হয়না কেনো ? এ প্রশ্ন সচেতন মহলের।
সিলেটে মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহাব বলেন, ট্রাকগুলো চলাচলের বিকল্প সড়ক না থাকায় নগরের ভেতর দিয়েই প্রবেশ করতে হচ্ছে। তবে রাত ১০টার আগে যাতে প্রবেশ না করতে পারে সেজন্য নগরের প্রবেশমুখে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা নিয়োইজত থাকেন।
রোববার নগরের সুবহানীঘাটে ট্রাক চাপায় মোটর সাইকেল আরোহী নিহতের বিষয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) সুদীপ দাস ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ঘটনার সময় নগরে ট্রাকের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল বলেও স্বীকার করেন। তবে পুলিশের কর্তব্যে অবহেলার বিষয়টি তিনি সম্পূর্ণ এড়িয়ে গিয়ে বলেন-দুর্ঘটনার পর ঘাতক ট্রাকটিকে আটক করা হলেও এর চালককে গ্রেফতার কার সম্ভব হয় নি। তবে পুলিশ তাকে আটকের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।