২২ এপ্রিল ২০২৩
দীর্ঘ এক মাসের সিয়াম সাধনার পর মহা আনন্দের অনাবিল বার্তা নিয়ে এসেছে ঈদুল ফিতর। ঈদ মানে উৎসব, আর উৎসব মানে আনন্দ। আরবি শব্দমূল ‘আউদ’ থেকে ঈদ। যার অর্থ ফিরে আসা বারবার। আর থির এর অর্থ ভঙ্গ করা, ভেঙ্গে দেওয়া ও ইফতার করা। অর্থাৎ সারা মাস দিনের বেলা আহার ও কামাচার থেকে বিরত ও সংযত থাকার নিয়ম ভেঙ্গে এই দিনে পুনরায় ভোগের দৈনন্দিন অভ্যাসের দিকে ফিরে আসা। তাই ঈদের এ দিনটির নাম করণ করা হয়েছে ঈদুল ফিতর।
ইসলামের একমাত্র ধর্মীয় দুটি উৎসব ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। ঈদুল ফিতর ইসলামের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুটো’র একটি। মাহে রমজানের শুরু থেকেই বিশ্বজুড়ে মহাখুশির দিন ঈদুল ফিতরের অপেক্ষা করে মুসলিম উম্মাহ। যে যার সাধ্যমতো এই দিনটি আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপন করে থাকেন। তখন মানুষে মানুষে বয়ে যায়আনন্দের বন্যা।
ঈদের আনন্দ সবার সঙ্গে ভাগ করে নিতে সকল বিড়ম্বনা ও প্রতিকুলতা ডিঙ্গিয়ে সবাই ছুটে যান আপন নীড়ে,স্বজনের কাছে।
ঈদুল ফিতর মানে সে আনন্দঘন উৎসব, যা এক মাস সিয়াম সাধনার পর আসে। ভোগ-বিলাসের সুশৃঙ্খল নিয়ম ও অভ্যাস, আচার-আচরণ,নৈতিক, আত্মিক এবং সামাজিক পরিশুদ্ধি লাভের পর সামষ্টিক কল্যাণ বয়ে নিয়ে আসে ঈদ । সংযম ও পরিশুদ্ধির শক্তিতে বলিয়ান হয়ে নতুন জীবনে ফেরার অঙ্গীকার নিয়ে ঈদ এই আসে। ঈদ আসে শত্রুতা ও বৈরিতার লৌহ যবণিকা অতিক্রম করে বন্ধুত্ব ও মিলনের হাত প্রসারিত করে। ঈদ আসে মহামিলনের মহোৎসবে মনকে মাতিয়ে তুলতে, পরিশোধিত হৃদয়ে পরিতৃপ্তির ছোঁয়া লাগাতে। তাই পবিত্র রমজান মাসে সিয়াম ও সংযম সাধনার পর চান্দ্রমাস শাওয়াল মাসের প্রথম দিনে সেই নিয়ম ভেঙ্গে পূর্বের ন্যায় স্বাভাবিক কর্মযজ্ঞে ফিরে যাওয়ার আনন্দময় দিবসটিই ঈদুল ফিতর নামে অভিহিত। অন্যদিকে মাসব্যাপি সিয়াম সাধনা, কিয়ম ও সংযম পালনের প্রতিদান এই দিয়ে দেওয়া হয় বলে দিনটির আরেক নাম ‘ ইয়াউমুল জায়েজ’ অর্থাৎ পুরস্কার দিবস।
দীর্ঘ এক মাস সিয়াম ও সংযম সাধনার পর মুসলিমরা ইসলামের বিধিবিধান ও নিয়ম-নীতির মধ্যে থেকে দিনটি আনন্দের সঙ্গে ধর্মীয় পালন করে থাকে।
পাপ-পঙ্কিলতা,অশালীনতা ও শ্রেণিবৈষম্য মুক্ত এক সুনির্মল আনন্দে ভরা দিন ঈদুল ফিতর। সুস্নিগ্ধ প্রীতি ও আনন্দঘন মিলন উৎসব ঈদুল ফিতর। ইসলাম ধর্মীয় উৎসব বলে ঈদুল ফিতর প্রধানত মুসলমানদের মধ্যেই সীমিত থাকে। তবে ইসলাম শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম এবং ঈদের অর্থ আনন্দ বিধায় প্রকারান্তরে ঈদ সব মানবের জন্যই কল্যাণ বয়ে আনে। মুসলিম উম্মাহর অন্যতম প্রধান ধর্মীয় ও জাতীয় উৎসব ঈদুল ফিতরের দিনটি অশেষ তাৎপর্য ও মহিমায় অনন্য। মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার শেষে শাওয়ালের বাঁকা চাঁদ নিয়ে আসে পরম আনন্দ ও খুশির ঈদ। রোজাদার যে পরিচ্ছন্নতার ও পবিত্রতার সৌকর্য দ্বারা অভিষিক্ত হন, যে আত্মশুদ্ধি, সংযম, ত্যাগ-তিতিক্ষা, উদারতা, বদান্যতা, মহানুভবতা ও মানবতার গুণাবলি দ্বারা উদ্ভাসিত হন, এর গতিধারার প্রবাহ অক্ষুণœ রাখার শপথ গ্রহণের দিন হিসেবে ঈদুল ফিতর সমাগত হয়। এদিন যে আনন্দধারা প্রবাহিত হয়, তা অফুরন্ত পুণ্য দ্বারা পরিপূর্ণ। সারা বিশ্বের মুসলমানের সর্বজনীন আনন্দ-উৎসব ঈদুল ফিতর। বছরজুড়ে নানা প্রতিকূলতা, দুঃখ-বেদনা সব ভুলে ঈদের দিন মানুষ সবার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিলিত হন। ঈদগাহে কোলাকুলি, সৌহার্দ, সম্প্রীতি ও ভালোবাসার বন্ধনে সবাইকে নতুন করে আবদ্ধ করে। ঈদ এমন এক নির্মল আনন্দের আয়োজন, যেখানে মানুষ আত্মশুদ্ধির আনন্দে পরস্পরের মেলবন্ধনে ঐক্যবদ্ধ হন এবং আনন্দ সমভাগাভাগি করেন।
ঈদের দিন মসজিদে, ময়দানে ঈদের নামাজে বিপুলসংখ্যক ধর্মপ্রাণ মুসল্লির সমাগম হয়ে থাকে। সবাই সুশৃঙ্খলভাবে কাতারবদ্ধ হয়ে ঈদের নামাজ পড়েন। নামাজ শেষে ধনী-নির্ধন, পরিচিত-অপরিচিত সবাই সানন্দে কোলাকুলি করেন।
রাজধানীতে জাতীয় ঈদগাহ ময়দান, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ দেশের সব ঈদগাহ ও মসজিদে ঈদের জামাতে পার্থিব সুখ-শান্তি, স্বস্তি আর পারলৌকিক মুক্তি কামনা করে আল্লাহর দরবারে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। সেই সঙ্গে বিশ্বশান্তি এবং দেশ-জাতি ও মুসলিম উম্মাহর উত্তরোত্তর শান্তি, সমৃদ্ধি, অগ্রগতি ও সংহতি কামনা করা হয়।
প্রকৃতপক্ষে ঈদ ধনী-দরিদ্র, সুখী-অসুখী, আবাল বৃদ্ধ বনিতা সব মানুষের জন্য কোনো না কোনোভাবে নিয়ে আসে নির্মল আনন্দের আয়োজন। ঈদ ধর্মীয় বিধিবিধানের মাধ্যমে সর্বস্তরের মানুষকে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ ও ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়াস এবং পরস্পরের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের শিক্ষা দেয়।
জগতের সব মানুষের সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি । পৃথিবী সর্বপ্রকার হিংসা-বিদ্বেষ ও হানাহানি মুক্ত হোক! আন্তধর্মীয় সম্প্রীতি ও সৌহার্দের বন্ধন দৃঢ়তর হোক! হাসি-খুশি ও ঈদের আনন্দে ভরে উঠুক প্রতিটি প্রাণ, ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে সংযম, সৌহার্দ ও সম্প্রীতির পরিবেশ পরিব্যাপ্তি লাভ করুক।এটাই হোক ঈদ উৎসবের ঐকান্তিক কামনা। তাই আসুন, ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দিই সবার মনেপ্রাণে। বুকে বুক মিলিয়ে আসুন সবাই সবার হয়ে যাই।